দুঃস্বপ্নে শিক্ষা!!
ঝকঝকে নীল আকাশ বুলবুলি পাখিটা কি মিষ্টি সুরে গাইছে যেন পৃথিবীর সব মিষ্টতা ওর কণ্ঠে ঢেলে দেয়া হয়েছে শুনতে বেশ লাগছে! কি সে মায়াবী সুর, যেন অন্য কোন জগতে ডুবে যাচ্ছি!! সকালটা আজ অন্যরকম চমৎকার একটা দিন। অবসন্ন লাগছেনা, সেকি" আজকে উঠতে যেয়ে একটু কষ্ট হচ্ছেনা!! পুরো সুস্থ মানুষের মতো উঠে বসল জুই নিজেকে সে বিশ্বাস করতে পারছিলনা তার অনেক হালকা লাগছে, এবার দেখছে তার পা গুলো নাড়াতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না অবাক হয়ে যাচ্ছে সে সেকি সে হাটতে পারছে এই অবস্থা দেখে তার দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ল। তার এত দিনের কষ্টের অবসান হল বুঝি!! এই ও কি সম্ভব!! মহান আল্লাহ চাইলে অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে পারেন সে তা ভেবে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগল। সে চিন্তা করল কিভাবে মহান আল্লাহর এই শুকরিয়া আদায় করা যায় সে অজু করে দু"রাকাত নামাজ আদায় করল তবে আজকের নামাজ অন্য সব নামাজের চেয়ে আলাদা সে অজু করে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পেরেছে, শুধু মাত্র মহান আল্লাহর দয়ায়! তা ভাবতে তার খুশিতে মন টা আনন্দে ভরে উঠলো। এবার বুঝি তার দুঃখ ঘুচল " নামাজ শেষ করে সে আয়নার সামনে দাড়াল নিজেকে দাড়ানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো সে কখনো ভাবতে পারিনি নিজেকে কখনো সুস্থ অবস্থায় দেখতে পাবে তা ভেবে প্রতিনিয়ত মহান রবের শুকরিয়া করতে থাকল। কিন্তু সেতো ভুলে গিয়েছে এখনো তাকে এই সুস্থ অবস্থায় কেউ দেখেনি যখন সবাই যখন দেখবে তখন সবার কি অনুভুতি হবে তা ভাবতে ভাবতে তার আম্মু তাকে দেখল, নিজের দৃষ্টিকে সরাতে পারছিল না"" একি আমার মেয়ে হাটতে পারছে! সবার জুইয়ের মতো একই অবস্থা হল। তাদের খুশির সীমা রইল না তারা এই খুশির খবর সবাইকে জানাতে চাইল কিন্তু জুই নিষেধ করল। কারণ সে চাইছে সবাইকে অবাক করে দিবে সে ঠিক করল সে সবার বাসায় যাবে তবে বোরখা পড়ে মুখ ঢেকে সবাই যে জুইকে চেনে সে জুই না,, সে এখন আর সবার মতো সুস্থ।
তো সে সবচেয়ে যাদের ভালোবাসে তাদের বাসায় গেল তার এই রুপ দেখে কেউই তাকে চিনতে পারলো না।
কারন চিনবে বা কি করে তারা তো জুইকে এই অবস্থায় কল্পনাই করেনি!! তবে জুই একটু মজা নিল সে তার পরিচয় দেয়নি , সে বলল সে তাদের দুর সম্পর্কের আত্মীয়। যাইহোক তাদের জুইয়ের সাথে কথা বলে একটু চেনা চেনা মনে হল যেন অনেক কাছের অনেক আপন, জুই এই বিষয় টি খুব উপভোগ করল। তাই যখন তারা তাকে চিনতে পারলো না তাই সে তাদের আসল পরিচয় দেয়নি, সে সবার বাসা থেকে ঘুরে আসল। তার আজকে দুনিয়া টা অন্যরকম লাগছে সবে যেন নতুন সজীব এভাবে কয়দিন চলে গেল! তো একদিন তার এক কাছের আত্মীয় তাদের বাসায় আসল দরজা খুলল জুই, এই দৃশ্য দেখে সে আত্মীয় বিশ্বাস করতে পারছিলনা! "সে জুই কে জড়িয়ে ধরল তার মানে সে অজ্ঞাত মেয়েটি আমাদের জুই!!
তারা সবাই এবার জানল জুই আর আগের জুই নেই তারা কতটা খুশি যে ভাষার বুঝানো সম্ভব না "!এই খুশি টা ছড়িয়ে পড়েছিল পাড়া প্রতিবেশীর মাঝে সবার জুইদের বাসায় আসছে যাচ্ছে কিভাবে সম্ভব তা শুনছে সবাই অবাক হয়ে শুনছে আর বলছে মহান আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব যাক এভাবে তাদের খুশির রেশ চলল অনেক দিন। এখন তার মুল্য হয়ে গেছে আগের থেকে অনেক বেশি। দেখতে দেখতে জুইয়ের মাঝে একটা পরিবর্তন দেখা গেল সে আস্তে আস্তে দুনিয়ার মধ্যে ব্যস্ত হয়ে গেল সে ভুলে গেছে সে আগে কি ছিল জীর্নশীর্ন একটা মেয়ে যে কিনা অন্যের উপর নির্ভর হয়ে থাকত কারও সাহায্য ছাড়া চলতে পারতো না,, সে এখন আগের মতো তার নামাজে মনোযোগী নয় এখন আর আগের মতো কুরআন পড়েনা যার আগে কিনা কুরআন একদিন না পড়লে ভালো লাগতো না এখন সে প্রিয় কাজটি অবহেলা করছে!! এখন তার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে সোস্যালসাইট গুলো,, তার ফ্রেন্ড লিস্টে ছেলেদের প্রাধান্যই এখন বেশি । সেতো আর আগের সে অসুস্থ জুই নেই,,তাই তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এখন অসুবিধা কোথায়??! এভাবে সে দুনিয়ার এসব অনর্থক জিনিসের প্রতি মগ্ন হয়ে পড়ল!! একটা ছেলে ফেসবুকে খুব সুন্দর সুন্দর পোস্ট করে জুই খুব মন দিয়ে পড়ে তার ভালোই লাগে!। একটা সময় জুই ছেলেটার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। একদিন সে ছেলেটা কে নক দিয়ে বসল সে ভাবল আমি তো আর বেশি কথা বলবনা,, একটু কুশল বিনিময় এর বাইরে আর কিছু না, সে প্রথমে সাধারণ বিষয় নিয়ে কথা বলল কুশল বিনিময় আর কি, ছেলেটি কে বলল আপনার পোসট গুলো অনেক সুন্দর ভালোই লাগে পড়তে,, এভাবে মাঝে মাঝে তাদের কথা হত,, একটা সময় ছেলেটা মেয়েটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এভাবে সে আস্তে আস্তে অন্ধকারের পথে এগুতে থাকে। জুই আগে ফেসবুকে ছবি দিতনা কেউ তাকে কখনো দেখিনি এবার সে ভাবল একটা ছবি আপ দিবে সে অনেক সুন্দর করে সেজে আর্কষনীয় হিজাব পড়ে ছবি আপলোড দিয়েই দিল!! এতে করে যে ছেলেটা সাথে কথা বলত তাকে দেখে সে আরও মুগ্ধ হয়ে গেল!! সাথে আরও অনেকের নানা মন্তব্য, অনেক সুন্দর, চোখ ফিরানো যায়না, মায়াবীনী,ইত্যাদি এমন সব মন্তব্য যা জুইয়ের ভালোই লাগল!! সে ভাবল ভালোই তো আমার সৌন্দর্যের সবাই প্রশংসা করছে কি বা ক্ষতি হয়ে যাবে একটু আমার প্রশংসা করলে। অথচ সে ভালোভাবে জানত এই কাজটি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছনীয়!! যে মহান আল্লাহ তাকে ভালোবেসে তাকে সুস্থ করে দিল সেই কিনা আল্লাহর আদেশ কে উপেক্ষা নিজের মনের চাহিদা পুরনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে ভুলে গেল আল্লাহর নেয়ামতের কথা।সে এবার নামাজ পড়া ছেড়ে দিল সাথে যথাযথভাবে পর্দা করাও!! অথচ সে যখন চলতে ফিরতে পারতো না সে নিয়মিত চেষ্টা করত নামাজ আদায় করতে, মহান আল্লাহর অপ্রিয় কাজগুলো থেকে দুরে থাকতে,,আর এখন সে এই জুই মহান রবের অপ্রিয় কাজগুলো করতে একটু দ্বিধা করছেনা!! এখন সে আর কারও খোজ খবর নেয়না, নিজের মনের মত কিছু না পেলে বাবা মায়ের সাথে রুঢ় আচরণ করে। একি পরিবর্তন!! যেখানে মহান আল্লাহর আরও কাছাকাছি হওয়ার কথা ছিল তা না করে সে মহান আল্লাহর থেকে আরও দুরে সরে গেল।
সে ছেলেটার সাথে জুইয়ের এখন বেশ ভালো সখ্যতা গড়ে উঠেছে এর মধ্যে কয়েক বার দেখা করেছে।একদিন কথা বলতে বলতে জুই সে ছেলেকে বলল আমার সমুদ্র অনেক পছন্দ, ইচ্ছে করে একটু সমুদ্র দেখতে। তখন ছেলেটা বলল আগামী সপ্তাহে আমরা সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি বড় বোনের সাথে তুমি কি যাবে আমাদের সাথে? তখন সে কিছুক্ষন ভেবে বলল যেহেতু তোমার বোন যাচ্ছে যাব আমি তোমাদের সাথে আর তুমি তো আমার ভালো বন্ধু তাইনা!! অথচ সে তখন পর্যন্ত বুঝেনি বাইরের জগতটা এতো সহজ না। কারণ বছরের পর বছর তার জীবনটা ছিল চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ । সে ভাবল যেহেতু তার বোন যাচ্ছে আমি তো যেতেই পারি এই সুযোগ আর নাও থাকতে পারে, অথচ সে জানত এভাবে একা বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না, তারপরে ও সে নিজের মনের চাহিদা কে প্রাধান্য দিল। যেমন ভাবা তেমন কাজ সে তার মাকে বলল সে তার এক বান্ধবীর বাসায় যাবে সেখানে একদিন থাকবে সে মিথ্যা বলে মাকে রাজি করালো মাও ভাবল মেয়ের জীবনটা তো ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কখনো বের হতে পারে নি তার অক্ষমতার কারণে, থাক একটু ঘুরুক পৃথিবী টাকে নতুন করে দেখুক। তাই মা রাজি হয়ে গেল। সে দিন টা চলে এল জুই আজকের অনেক সুন্দর ভাবে সেজেছে মাথায় সুন্দর একটা হিজাব পড়ে নিয়েছে এই প্রথম সে মিথ্যা বলে দুরে কোথাও যাচ্ছে জুই দেখল ছেলেটা একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে জুই বলল কোথায় তোমার বোন?? সে বলল এইতো একটু সামনে কিছু পথ গেলে আমার বোন আমাদের সাথে যাবে। তো জুই আর কিছু না বলে গাড়িতে বসল ছেলেটা তার পাশে বসল গাড়ি চলা শুরু হল জুই ভাবছে সে সমুদ্র দেখবে সমুদ্রের অসীমতা উপভোগ করবে। ছেলেটা বারবার জুইয়ের দিকে তাকাচ্ছিল সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই!! ছেলেটা বলল আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে অন্যদিন যেমন দেখি তেমন না অন্যরকম সুন্দর!! জুইয়ের তখন কিছুটা ভালো লাগল আর কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল,, সে লক্ষ্য করল গাড়ি চলছে অনেকক্ষন ধরে তার বোনের কোন দেখা নেই, জুই জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার তোমার বোনকে দেখতে পাচ্ছিনা কেন? আর কত দুর?? তখন ছেলেটা বলল এইতো আর একটু এগুলে দেখতে পাবে। এখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে, এবার জুইয়ের ক্ষানিকটা ভয় হতে শুরু করল সে ভাবল আমি কি ভুল করছি সে ছেলেটাকে বলল আর কতক্ষণ সে এবার একটা হাইওয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি টা থামাতে বলল তারা নামল একটা ব্রিজের ওপর। নিচে বয়ে যাচ্ছে টলটলে নদীর পানি তখন জুই বলল কি ব্যাপার আমরা এখানে নামলাম কেন? সে বলল সামনে একটা খাবার দোকান তার পাশে তার বোনের বাড়ি তখন জুই বলল এতদূর এসে এখন বলছ এতদুর তোমার বোনের বাড়ি এখন তার সন্দেহ হল ছেলেটা মিথ্যা বলছেনা তো যাকে এত ভালো বন্ধু মনে করেছে!। তার ধারণাই সত্য হল ছেলেটা এবার তার হাতটি ধরতে চাইল যদি ও এর আগে তার কয়েক বার দেখা করেছে কিন্তু এত কাছাকাছি কখনো হয়নি ছেলেটা বলল, আসলে আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছি আমাদের কোন সমুদ্র দেখতে যাওয়ার কথা ছিল না, আর আমার বোন আছে বলেছি তা সবই মিথ্যা,, আসলে আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছি তাই চাইলাম তোমার সাথে একা কথা বলি,, তখন জুই বুঝে ফেলল তার উদ্দেশ্য!! সে বলল কথা বলতে চাও ভালো কথা তাই বলে মিথ্যা বলে আমাকে এত দুরে নিয়ে আসলে কেন?!! আমিতো তোমাকে অনেক ভালো ভেবে ছিলাম তোমার ভালো ভালো পোস্ট পড়ে তোমার প্রতি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম বাস্তবে যে তুমি এত খারাপ হবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি! আসলে আমারই ভুল ছিল"!! তখন ছেলেটা বলল যা হবার তা তো হয়েছে এখন ক্ষতি কি যদি আমরা বন্ধুর চেয়ে আরও কাছাকাছি হই। জুই বুঝল এখান থেকে আর ফিরে আসার সুযোগ নেই এই কথা শুনে তার মনে ভয় চেপে বসল,,
নিজেকে তিরস্কার করল সে সরল মনে বিশ্বাস করে কি বোকামীটা করল!! সে তখন উপায় না পেয়ে চিৎকার শুরু করল ছেলেটা যখন দেখল এতে সে বিপদে পড়বে তখন সে জুইকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিল ছেলেটার মাথায় আর কিছু কাজ করছিলো না একি করল সে! সে আর কিছু না ভেবে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গেল। আর এদিকে জুই ডুবন্ত পথযাত্রী, সাতার জানা নেই তার,, সে অথৈ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সে ভাবছে এটা সে কি করল কোন অন্ধকারে সে পা বাড়াল সে বলল হায় আল্লাহ! আমি কি করলাম এই ভুল থেকে কি কোন বাঁচার আর কোন পথ আছে তা ভাবতে ভাবতে তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসল৷
রোদের তেজে জুইয়ের চোখ খুলে গেল বুলবুলি টা মিষ্টি সুরে গেয়ে যাচ্ছে গান অবিরিত! সকাল টা সত্যি আজ অন্যরকম। একি এতক্ষণ জুই স্বপ্ন দেখছিল! সে জুই, যে চলতে ফিরতে পারেনা সে বলল যাক তা স্বপ্ন ছিল, এই স্বপ্নটি যদি সত্যি হত তাহলে তার জীবন টা দুঃস্বপ্নে পরিনত হত!! তা ভেবে জুই হাফছেড়ে বাঁচল!! সে কৃতজ্ঞতা চিত্তে শুকরিয়া আদায় করতে থাকল মহান আল্লাহর। সে উপলব্ধি করল যে কষ্টের জন্য সে সবসময় দুঃখিত হত, সে যা চায় তা পেয়ে যদি মহান আল্লাহকে ভুলে যায় তার চেয়ে তার প্রিয় রবকে স্বরন করে, দুঃখের মিষ্টতা অনেক গুনে ভালো।
সে যেমন আছে তেমনই অনেক ভালো আছে। হয়তো তার চাওয়া পছন্দনীয় বিষয়টি তার জন্য ভালো নাও হতে পারে। কারণ কার জন্য কোন অবস্থা ভালো হবে তা মহান রব সবচেয়ে বেশি ভালো জানেন।।
কারণ মহান রব তো উত্তম পরিকল্পনাকারী মহান জ্ঞানী।
এটা একটা গল্প মাত্র! এই গল্প থেকে অনেক কিছু শিক্ষনীয় বিষয় আছে যদি আমরা উপলব্ধি করি "!
Comments
Post a Comment