শেষ বিদায়!!
বুকের ভেতর টা চিনচিন করে ব্যথা দিয়ে উঠলো জুইয়ের। ব্যথায় তার ঘুম ভেঙে গেল মাঝে মাঝে বুকের ভিতরটা হালকা ব্যথা অনুভব হয় কিন্তু আজ ব্যথা টা অন্যরকম এমনই ব্যথা যে তার ঘুম ভেঙে গেছে জুই ঘুম ঘুম চোখে শুনতে পেল মিষ্টি মধুর সুরে ফজরের আজান জুই ভাবল যাক ভালোই হল ফজরের সাথে যখন ঘুম ভেঙে গেল আর না ঘুমিয়ে নামাজ আদায় করে নেয়ায় ভালো বুকের ব্যথা টা এখন একটু কম লাগছে সে আস্তে আস্তে উঠে বসল সে তো আর চলতে পারেনা তাই উঠতে গেলেও জুইয়ের কষ্ট হয় জুই ভাবে কষ্ট গুলো কবে দূর হবে ভাবতে ভাবতে সে এবার শান্ত মনে নামাজ পড়ে নিল নামাজ পড়তে পড়তে দেখছে অন্ধকার আকাশ আলো দিতে শুরু করেছে পাখিদের কোলাহলে চারদিক মুখরিত হয়ে গেছে জুইয়ের আজকে অন্যরকম লাগছে আজকে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়েনি সকালের সূর্য টা এদিকে হাসছে প্রকৃতির নিরব সৌন্দর্য
দেখে জুই মুগ্ধ জুই প্রকৃতি অনেক ভালোবাসে রাতের আকাশের শুভ্র চাঁদটা দেখে বলে আহ তুমি এত সুন্দর!! জুইয়ের সবসময় তার রবের কাছে একটাই চাওয়া তার জীবনের শেষ দিন টা যদি চাদের আলোর মতো সুন্দর হত!! জীবন সে পার করছে সময়ের ক্ষেপনে স্বপ্নের আলাপনে সে স্বপ্ন কি তার মহান রব পুরন করবেন?? জুই দেখছে আজকের আকাশ টা কি সে গাঢ় নীলে ছেয়ে গেছে যেন তার জীবনের সকল বেদনা আকাশে নীল হয়ে জ্বলজ্বল করছে
এখন আর শরীর টা খারাপ লাগছেনা বরং প্রকৃতির রঙে তার মনে প্রফুল্ল সজীবতা ফিরে পেয়েছে আজকে জুই ভাবল যেহেতু বৃহস্পতিবার আজকে রোযা রাখা যায় আর শরীর টা ভালো লাগছে কেন জানি আজকে তার রবকে খুশি করতে ইচ্ছে করছে জুইয়ের ইচ্ছা তার রব যদি জুইকে রোযা রাখা অবস্থায় তাকে স্বাগত জানাত যে দিনটার অপেক্ষা জুই বছরের পর তার রবের দিকে চেয়ে আছে জুইয়ের আশা তার রব তাকে নিরাশ করবেনা জুই সবসময় যে খুব বেশি ইবাদত করতে পারে তা কিন্তু না যখন তার ভালো লাগে তখন সে চেষ্টা করে তার রবের প্রিয় বান্দা যদি হতে পারত সে কি তার রবের প্রিয় বান্দা হবার যোগ্যতা রাখে যদি ও সে চলতে ফিরতে না পেরে ও অসংখ্য ভুল করে যা তার শোভা পায়না!!
যাক আজকে একটু চেষ্টা করা যাক মহান রবকে খুশি করার এবার জুই একটু ঘুমিয়ে নিল উঠলো ১০টার দিকে উঠে প্রতিদিন যা করে তাই করল হাতমুখ ধুয়ে নিল জুইয়ের আম্মু বলল জুই নাস্তা করে নে জুই বলল না আম্মু রোযা রেখিছি তার আম্নু আর কিছু বলল না দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেল আজকে জুইয়ের ক্লান্তি লাগছেনা মনের মধ্যে কেমন একটা আনন্দ অনুভুত হচ্ছে জুই বলল আজকের দিনটা অন্যসব দিনের চেয়ে আলাদা তার কেন জানি মনে হল আজকে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে দুপুর টা নিস্তব্ধতায় চলে গেল জুই চিন্তা করে জীবনের কত বসন্ত শেষ হয়ে গেছে কত প্রতিকুলতা সে পার করেছে কত কষ্ট বয়ে বেরাচ্ছে কত অশ্রু ঝরিয়েছে তার জীবন টা কি আজকের আকাশটার মতো শেষ হাসিটা হাসবেনা,, তা মনে করতে একটা ফোন এল নাম্বার টা দেখে জুই চিনতে পারলো না আশেপাশে কেউই নেই যে অচেনা ফোনটা ধরবে,, সে ফোনটা ধরল ও পাশ থেকে সালাম দিয়ে বলল জুই? খুব চেনা চেনা মনে হল অনেক কাছের অনেক আপন জুই আমায় চিনতে পেরেছ যাকে অনেক প্রিয় মনে করতে যার সাথে তুমি মাঝে মাঝে কথা বলতে হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি তোমায় অনেক খুজেছি অবশেষে তোমায় হারিয়ে পেলাম জুই তো পুরো অবাক এত সুন্দর করে কে বলতে পারে জুই বলল তুমি সাফিয়া ওপাশ থেকে সাফিয়া বলল হ্যা আমিই সে তুমি কেমনে এত পর হতে পারলে আমি বুঝতাম না ভালোবাসার মানে তুমি আমায় বুঝিয়ছ ভালোবাসা কি তুমি কি জান আমি তোমায় কত মিস করতাম কিন্তু সত্যি বলতে ব্যস্ততার কারণে তোমার সাথে আর হইনি কথা জুই বলল শুনেছি তোমার বিয়ে হয়েছে জাননা আমি তখন শুনে অনেক খুশি হয়েছিলাম সাফিয়া বলল জুই তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা আমি যেমন আল্লাহর কাছে চেয়েছি আর তুমি সবসময় যেমন বলতে আমি সে ধরনের মানুষের সাথে মহান আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ সেদিন আমি বুঝেছিলাম ভালোবাসার মানে তুমি আমায় কতটা ভালোবাসতে তুমি তোমার বন্ধুর প্রতি সবসময় শুভকামনা জানাতে
জুইয়ের অন্তর টা খুশিতে ভরে উঠলো সে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে বলল যাক আমার প্রিয় মানুষ টি এখন ভালো আছে খুশিতে তার নয়ন দুটো ছলছল করছিলো যাকে বলে আনন্দের অশ্রু সাফিয়া বলল মানুষ টি অনেক ভালো আমাকে অনেক ভালোবাসে এভাবে কথা বলতে বলতে দেখল শেষ বেলা প্রায় চলে এসেছে সে সাফিয়াকে বলল আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি আমাকে মনে করেছ একদিন এস তোমার ভালোবাসার মানুষ টিকে নিয়ে বলতেই জুইয়ের আবার সে ব্যথা টা অনুভুত হল ব্যথা টা আস্তে আস্তে তীব্র হতে শুরু করল জুই বলল সন্ধ্যা হতে চলল বন্ধু আবার হয়তো কথা হবে আর আমার ভালোবাসা সবসময়ই আগের মতোই থাকবে তখন সাফিয়া বলল জুই তুমি সবসময়ই নিজেকে গুটিয়ে রাখ তোমাকে আর হারাতে চাই না জুই হেসে বলল আমি হারালাম কোথায় আমি তো তোমার মনের মধ্যে আছি যখনই মনে করবা আমাকে কাছে পাবে বলতে বলতে কথা শেষ হল জুই ভাবছে বুকের ব্যথা হয়তো অনেক ক্ষন না খেয়ে থাকায় এ অবস্থা হতে পারে জুই কিছুক্ষন এবার কুরআন পড়তে শুরু করল কিন্তু ব্যথার জন্য মনোযোগ দিতে পারছেনা ইফতারের সময় বেশি বাকি নেই জুইয়ের এই ব্যথার মাঝে একটা অন্যরকম আনন্দ অনুভব করছে শেষ বিকেলের সুর্যটা নিভু নিভু করছে পাখি গুলো শ্রান্ত দেহে নীড়ে ফিরছে জুই তা বসে দেখছে জুই দেখছে তার শরীর টা কেমন শীতল লাগছে তার মনে হচ্ছে তার রব এতদিনে তার ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছেন জুইয়ের আম্মু বলছে একটু পানি খেয়ে নে এখনি আযান দিবে জুই ক্লান্ত দেহে পানি হাতে নিল তখনও বুকের ব্যথা বেড়েই চলেছে তা সে কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না মাগরিবের মুয়াজ্জিনের দরাজ কন্ঠে জুইয়ের কানে আজান ভেসে এল অমনি তার হাত থেকে পানিটা পড়ে গেল সে আবছা চোখে একটা শুভ্র আলো দেখতে পেল কে যেন বলছে তুমি চলে এস তোমার প্রভুর অপার ভালোবাসা সন্তুষ্টি নিয়ে এভাবে জুইয়ের নিভু চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল এত দিনের প্রতীক্ষা অপেক্ষার অবসান হল তার শেষ দিনটি শুভ্র চাঁদের আলোর মতো ধরা দিল
Comments
Post a Comment