আল কুরআন অন্ধকারে আলো !


মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কুরআন নাজিল করেছেন যাতে আমরা সঠিক পথে থাকতে পারি এই কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার ও অমুল্য ধন। আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি  যা আঁকড়ে  ধরলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবেন না তা হলো মহান আল্লাহর বানী আলকুরআন  ও আমার সুন্নাহ( যা আমরা হাদিস  হিসেবে জানি).  আল কুরআন এমন এক  কিতাব  আমাদের  আলোর পথ দেখায় এমন কিছু  নেই যে যা কুরআনে বলা হয় নি! আমাদের জীবনে প্রতি টি ক্ষেত্রে সমাধান দেয় আলকুরআন। আশাহত দের আশার বানী,পথহারা দের আলোর দিশা!মহান আল্লাহ বলেন (আলিফ-লাম্-রা, এ কিতাব, আমরা এটা আপনার প্রতি নাযিল করেছি [১] যাতে আপনি মানুষদেরকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে বের করে আনতে পারেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে [২], পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিত পথের দিকে [৩],সুরা ইব্রাহিম).  আল কুরআন পৃথিবীতে এটা একমাত্র কিতাব যা বারবার  পড়া হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই  একমাত্র কিতাব  যা আমরা  বেশিরভাগ মানুষ না বুঝে পড়ি!! মহান আল্লাহ এই কিতাবে কি বললেন আমাদের জন্য তা আমরা একটু বুঝার চেষ্টা করি না,, এই কুরআন পড়াও আমাদের  জন্য হয়ে গেছে আনুষ্ঠানিকতার অংশ  !কেউ মারা গেলে তার পাশে বসে খতম দেই অথবা  রামাদান মাসে  মাঝে মাঝে পড়া হয়!!  এই কুরআন মৃত দের শোনানোর জন্য নাজিল হয়নি, নাজিল হয়েছে জীবিতদের জন্য সর্তক বানী হিসেবে,, আমরা কুরআনের মর্যাদাই বুঝলাম না।  যে কুরআন কে আমাদের আকড়ে ধরার কথা আমরা কি করছি কুরআন কে সুন্দর একটা কাপড়ে মুড়িয়ে  সবচেয়ে উচু তাকে রেখে দিচ্ছি!! দিন চলে যায় মাস চলে যায়  বছর পেরিয়ে যায়  এমনকি পুরো জীবন টা চলে যায় তারপর আর একটু কুরআন পড়া হয় না বুঝা হয়না কুরআনের উপর ধুলো জমে যায়  কি হতভাগ্য  হলে আমরা এমন আচরণ করি!!
মহান আল্লাহ বলেন ( এই কিতাব সুসংবাদদাতা সতর্ককারী। অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে. ( সুরা ফুরকান :আয়াত ৪)  অতএব, তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?  (সুরা মুহাম্মদ:২৪) আল কুরআন এমন এক সুন্দর করে কিতাব  যা কোটি হৃদয়ে ধারণ কৃত কারন মহান আল্লাহ নিজে এই কুরআনের হেফাজত করবেন  কেয়ামত পর্যন্ত এটা হচ্ছে কুরআনের বড় নিদর্শন! ( অর্থাৎ এই বাণী, যার বাহক সম্পর্কে তোমরা খারাপ মন্তব্য করছ, আল্লাহ নিজেই তা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি একে কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হওয়া থেকে হেফাযত করবেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না---সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত ।" [সূরা ফুসসিলাত: ৪২]
আরও বলেছেন, “নিশ্চয় এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমাদেরই। কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, তারপর তার বর্ণনার দায়িত্ব নিশ্চিতভাবে আমাদেরই” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৭-১৯]।
সুতরাং একে বিকৃত বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগ ও তোমরা কেউ কোনদিন পারবেনা। আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং এর হেফাযত করার কারণে শক্ররা হাজারো চেষ্টা সত্বেও এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। রিসালাত আমলের পর আজ চৌদশ’ বছর অতীত হয়ে গেছে। দ্বীনি ব্যাপারাদীতে মুসলিমদের ক্রটি ও অমনোযোগিতা সত্বেও কুরআনুল কারীম মুখস্ত করার ধারা বিশ্বের সর্বত্র পূর্ববৎ অব্যাহত রয়েছে। প্রতি যুগেই লাখো লাখো বরং কোটি কোটি মুসলিম যুবক-বৃদ্ধ এবং বালক ও বালিকা এমন বিদ্যমান থাকা, যাদের বক্ষ-পাঁজরে আগাগোড়া কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে।
প্রখ্যাত আলেম সুফিয়ান ইবন ওয়াইনা এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, কুরআনুল কারীম যেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের আলোচনা করেছে, সেখানে বলেছেঃ
(بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتٰبِ اللّٰهِ)
[সূরা আল-মায়েদাঃ ৪৪] অর্থাৎ ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে আল্লাহর গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জীলের হেফাযতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ কারণেই যখন ইয়াহুদী ও নাসারাগণ হেফাযতের কর্তব্য পালন করেনি, তখন এ গ্রন্থদ্বয় বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে গেল। পক্ষান্তরে কুরআনুল কারীম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
(وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ) 
অর্থাৎ “আমিই এর সংরক্ষক" [সূরা আল-হিজরঃ৯]।
সুতরাং এটি কখনও অসংরক্ষিত হওয়ার সুযোগ নেই। [কুরতুবী]
কুরআনের প্রতি টি কথায় এতো মাধুর্য এতো সৌন্দর্য যা অন্য কিছুতে পাওয়া যায়না এই কুরআন নাজিল হয়েছে ক্রমে ক্রমে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে  যে সময় কুরআন নাজিল হয়েছিলো সে সময় টা ছিল অন্ধকার যুগ আর কুরআন কে ধারণ করে সে সময়ের অজ্ঞতায় থাকা মানুষ গুলো পরিনত হয়ে ছিল পৃথিবীর স্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে  আজ আমরা  কুরআনের কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করতাম এবং সে অনুযায়ী আমল করতাম জীবনের প্রতি টি ক্ষেত্রে তাহলে আমাদের এতো সমস্যা থাকতো না  আমরা  হতাম না দুর্দশা গ্রস্ত জাতি!! আমাদের কুরআন পরিপূর্ণ বুঝতে হলে অবশ্যই মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাঃ এর সুন্নাহ সম্পর্কে ও জ্ঞান থাকা জরুরি কারণ মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর পুরো জীবনটাই ছিল কুরআনের উপর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিল তার চরিত্র। [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৯১] আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেছেন, “আমি দশ বছর যাবত রাসূলুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোন কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কোন কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? [বুখারী: ৬০৩৮, মুসলিম: ২৩০৯] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তায় আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৮১, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৬৭০]
একবার মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাঃ এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে মা আয়েশা রাঃ বলেন  তোমরা কি কুরআন পড় না!! অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চরিত্র ছিল আল কুরআন!! তাই এখন আর ফিরে তাকাবার সময় নেই !!কারণ সময় শেষ হয়ে গেলে আফসোস করা ছাড়া আর  কোন উপায় থাকবেনা,, তাই  সময় থাকতে এখন থেকে কুরআন ও হাদিসের উপর বেশি চর্চা করা এবং সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা.. কুরআন ও হাদীছ হ’ল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম))-এর রেখে যাওয়া দুই অনন্য উত্তরাধিকার, দুই জীবন্ত মু‘জেযা। যা মানবজাতির জন্য চিরন্তন মুক্তির দিশা। অতএব ইহকালে ও পরকালে সফলকাম হওয়ার জন্য সর্বাবস্থায় সেদিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারব।

Comments

Popular Posts