মুসলিম ভ্রাতৃত্ব
মুমিনরা পরষ্পর ভাই ভাই! যা সুরা হুজুরাতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে(১০. মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই(১); কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও)।এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এই থেকে বুঝা যায় ভাই ভাই কোন দ্বন্দ্ব না থাকে। কিন্তু আমরা আজ কি দেখছি মুসলিমদের মাঝে কোন সম্প্রিতি নেই! নেই কোন ভালোবাসা!মুসলমানদের মাঝে আজ পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে,, "আছে শুধু দ্বন্দ্ব বিভেদ হিংস্রতা। সামান্য স্বার্থের জন্য নিজের ভাইকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করছেনা! আজ যদি মুসলিমরা কোরআনুল কারিমের এই আয়াতের কথাও মেনে চলত তাহলে আজ হয়তো আমাদের এতো সমস্যা থাকতো না! মুসলিমদের মাঝে কোন ঐক্য নেই । কিন্তু অতীতে এমন একটা সময় ছিল যখন মুসলিমদের মাঝে ঐক্য থাকার কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাসকদের পরাজিত করতে পেরেছিল এবং একটি সুন্দর সভ্য সমাজ গড়তে পেরেছিল কিন্তু তখন সংখ্যায় ছিল অল্প শুধু মাত্র ঈমানী শক্তি তে ছিল বলিষ্ঠ!এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বে একতাবদ্ধ। অথচ আজ মুসলিমরা সংখ্যায় বেশি হওয়া সত্যেও লাঞ্চিত অপমানিত !! কারণ মুসলিমরা আজ কোরআন সুন্নাহ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আজ আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, একজনের কোন বিপদে আমরা এখন আর এগিয়ে যাইনা অপরের কষ্টে কষ্ট পাইনা,, অপরের আনন্দে আনন্দিত হইনা!! আমাদের বিবেক মরে গেছে ! " একজন মুমিনের দৃষ্টান্ত কেমন হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গিয়েছেন এভাবে ((১) জারীর ইবন আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে “বাই’আত” নিয়েছেন। এক, সালাত কায়েম করবো। দুই, যাকাত আদায় করতে থাকবো। তিন, প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবো।” [বুখারী: ৫৫] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফারী।” [বুখারী: ৬০৪৪, মুসলিম: ৬৩] অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।” [মুসলিম: ২৫৬৪, কিতাবুল বিরর ওয়াসসিলাহ, তিরমিযী: ১৯২৭]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম আর নাই। [মুসনাদে আহমাদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে।হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে ৷ [বুখারীঃ ৬০১১, মুসলিম: ২৫৮৬]
আরো একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মত একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে। [বুখারী: ২৬৪৬, মুসলিম: ২৫৮৫] অন্য হাদীসে এসেছে, একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করতে পারে না আবার তাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে না। [বুখারী: ২৪৪২, মুসলিম: ২৫৮০] অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে। [মুসলিম: ২৬৯৯] হাদীসে আরো এসেছে, কোন মুসলিম যখন তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোআ করে তখন ফেরেশতা বলে, আমীন। (কবুল কর।) আর তোমার জন্যও তদ্রূপ হোক। [মুসলিম: ২৭৩২]
তাই আমরা যদি সত্যি নিজেদের ঈমানদার মুসলিম দাবি করি তাহলে অবশ্যই এই কথা গুলো গুরুত্বের সাথে মেনে চলা জরুরি। তাহলে এই দুনিয়ায় ফিরে আসবে শান্তি,, ফিরে পাব আমাদের সেই হারানো ঐতিহ্য!!
তাই আমরা যদি সত্যি নিজেদের ঈমানদার মুসলিম দাবি করি তাহলে অবশ্যই এই কথা গুলো গুরুত্বের সাথে মেনে চলা জরুরি। তাহলে এই দুনিয়ায় ফিরে আসবে শান্তি,, ফিরে পাব আমাদের সেই হারানো ঐতিহ্য!!
Comments
Post a Comment